মন কি করে বন্ধু হয়ঃ ভগবদ্গীতায় ভগবান শ্রীকৃষ্ণ
বলেন-
বন্ধুরাত্মাত্মনস্তস্য যেনাত্মৈবত্মনা
জিতঃ।
অনাত্মনস্তু শত্রুত্বে বর্তেতাত্বৈব
শত্রুবৎ।।
(ভঃ গীঃ ৬/৬)
“যিনি
তাঁর মনকে জয় করেছেন, তাঁর মন তাঁর পরম বন্ধু, কিন্তু যিনি তা করতে অক্ষম, তাঁর মনই
তাঁর পরম শত্রু”।
এইভাবে
মনের প্রবৃত্তি সুখ বা দুঃখের কারণ হয়। মনকে একটা ধারালো ছুরির সঙ্গেও তুলনা করা যেতে
পারে। দুর্বৃত্তরা ধারালো ছুরিটি কাউকে হত্যা করতে বা কারো অনিষ্ট সাধনে ব্যবহার করে,
আবার একজন সুদক্ষ চিকিৎসক সে ছুরি কারো জীবন রক্ষা করতে ব্যবহার করেন। সেক্ষেত্রে ছুরিটির
কোনো দোষ বা গুণ নেই। কারো মন যখন নিয়ন্ত্রিত থাকে তখন তার সাহায্যে জীবনের সর্বোত্তম
পূর্ণতা লাভ করা যায়। তিনি স্বেচ্ছায় পরমেশ্বর ভগবানের (যিনি
হৃদয়ে পরমাত্মারূপে বিরাজমান) নির্দেশ মেনে চলেন। এরূপ ব্যক্তি সুখ-দুঃখ, শীত-গ্রীষ্ম
আদি জড় অস্তিত্বের দ্বৈত ভাবের দ্বারা বিচলিত হন না। এই অবস্থাই হলো ব্যবহারিক সমাধি
অথবা সর্বদা পরমেশ্বরের চিন্তায় মগ্ন থাকা।
ভগবদ্গীতায়
ভগবান শ্রীকৃষ্ণ অনিয়ন্ত্রিত মনের গতি প্রকৃতি সম্পর্কেও বর্ণনা করেছেন। ঐ প্রকার মন
সবসময়ই বিভিন্ন প্রকার ইন্দ্রিয় তৃপ্তির পরিকল্পনা করে। ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বলেন- “ইন্দ্রিয়ের বিষয়
সমূহ সম্বন্ধে চিন্তা করতে করতে মানুষের তাতে আসক্তি জন্মায়, আসক্তি থেকে কাম উৎপন্ন
হয় এবং কামনা থেকে ক্রোধ উৎপন্ন হয়। ক্রোধ থেকে সম্মোহ, সম্মোহ থেকে স্মৃতিবিভ্রম,
স্মৃতিবিভ্রম থেকে বু্দ্ধিনাশ এবং বু্দ্ধিনাশ হওয়ার ফলে সর্বনাশ হয়। অর্থাৎ মানুষ পুনরায়
জড়জগতের অন্ধকূপে অধঃপতিত হয়”- (ভঃ গীঃ ২/৬২-৬৩)।এইভাবে
অসংযত মনই আমাদের এই জড় জগতে থাকাকালীন যাবতীয় দুর্দশার কারণ। যদি মন সংযত হয় তাহলে ইন্দ্রিয়গুলি আর আমাদের
বিপদে ফেলতে পারে না। বুদ্ধিতে অবশ্যই শক্তিশালী হতে হবে, যাতে মন তার (বুদ্ধি) নিয়ন্ত্রণে থাকে। আর তখন ইন্দ্রিয়গুলো স্বাভাবিকভাবেই
সংযত হয়ে যাবে এবং তাকে (বুদ্ধি) অনুসরণ করবে।
রথের সারথীকে অবশ্যই দক্ষতার সঙ্গে চিৎকার করে, শক্তি প্রয়োগ করে লাগামকে ধরে রাখতে
হবে, যাতে ঘোড়াগুলি নিয়ন্ত্রণে থাকে। উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশ নিয়মিতভাবে শ্রবণ
করে বুদ্ধিকে যথেষ্ট শক্তিশালী করে তুলতে হবে।
ভগবদ্গীতায়
ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বলেন-
তদ্বিদ্ধিপ্রনিপাতেন পরিপ্রশ্নেন
সেবয়া।
উপদেক্ষ্যান্তি তে জ্ঞানং জ্ঞানিনস্তত্ত্বদর্শিনঃ।।
(ভঃ গীঃ ৪/৩৪)
‘সদগুরুর
শরণাগত হয়ে তত্ত্বজ্ঞান লাভ করার চেষ্টা কর। বিনম্র চিত্তে প্রশ্ন জিজ্ঞাসা কর এবং
অকৃত্রিম সেবার দ্বারা তাঁকে সন্তুষ্ট কর। তা হলে সেই তত্ত্বদ্রষ্টা পুরুষেরা তোমাকে
জ্ঞান উপদেশ দান করবেন’।
এই পদ্ধতি
অনুসরণ করলে বুদ্ধি আরো শক্তিশালী হবে এবং অসংযত মন অচিরেই শান্ত হবে। পারমার্থিক শাস্ত্র
নির্দেশ সমূহ বুদ্ধির খাদ্য স্বরূপ। ঐ সকল বুদ্ধি বৃত্তিকে বিকশিত করে এবং মনকে পবিত্র
করে তোলে। যখন বুদ্ধি (চালক) দক্ষ ও শক্তিশালী
হয়, তখন সে মনকে (লাগাম) দৃঢ়ভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে
পারে, ফলে আত্মা (আরোহী) শান্তিপূর্ণভাবে ভ্রমণ
করতে পারবে। কিন্তু যতক্ষণ বুদ্ধি মনের থেকে দুর্বল থাকে, ততক্ষণ আমাদের জীবন সুখ বা
শান্তি কোনোটাই সম্ভব নয়।
(সংকলনঃ মন নিয়ন্ত্রণের কৌশল)
“জয় রাধেশ্যাম”
==বাংলাদেশ সেবাশ্রম==
0 comments:
Post a Comment
Note: Only a member of this blog may post a comment.