সনাতন বা হিন্দু ধর্ম গ্রন্থের নাম




     
প্রত্যেক ধর্মেরই নিজস্ব ধর্মগ্রন্থ আছে, ধর্মগ্রন্থের অপর নাম শাস্ত্র। অন্য ধর্মের তুলনায় হিন্দু শাস্ত্রের সংখ্যা অগণিত। তার কারণ হল হিন্দুধর্ম অত্যন্ত প্রাচীন। তাই একে সনাতন ধর্ম বলা হয়। ঈশ্বরের স্বরূপ, জীবের সঙ্গে ঈশ্বরের সম্পর্ক, ঈশ্বর প্রাপ্তির উপায় প্রভৃতি বিভিন্ন বিষয় শাস্ত্র থেকেই জানা যায়। হিন্দু শাস্ত্রের সংখ্যা অনেক হওয়াতে বিভিন্ন সত্যদ্রষ্টা ঋষি ঈশ্বরপ্রাপ্তির বিভিন্ন উপায়ের কথা বলেছেন। প্রত্যেক ধর্মে একাধিক ধর্মগ্রন্থ বা শাস্ত্র থাকলেও তার মধ্যে একখানা সিদ্ধশাস্ত্র থাকে। হিন্দুধর্মের সিদ্ধশাস্ত্র হল বেদ

বৈদিক যুগের হিন্দু ঋষিগণ বেদকে ভিক্তি করে যুগপোযোগী কতকগুলি শাস্ত্র রচনা করেন। সেগুলো হলঃ স্মৃতিসংহিতা, ইতিহাস, পুরাণ, আগম এবং ষড়-দর্শন। এগুলি উল্লেখযোগ্য হিন্দুধর্ম গ্রন্থ বলে পরিচিত।


হিন্দু ধর্মীয় গ্রন্থের নামঃ
 
বেদঃ হিন্দুধর্মের প্রসিদ্ধশাস্ত্র গ্রন্থ বেদ । বেদের অপর নাম শ্রুতি। বেদ চার প্রকার। যথা- ক) ঋক্‌বেদ, খ) সামবেদ, গ) যজুর্বেদ এবং ঘ) অথর্ববেদ। ঋষি কৃষ্ণ দ্বৈপায়ণ বেদব্যাস এই বেদের বিভাগ কর্তা।
প্রত্যেক বেদের দুটি অংশ তা হলঃ ক) সংহিতা (সংহিতায় আছে মন্ত্র) এবং খ) ব্রাহ্মণ (ব্রাহ্মণে আছে তার অর্থ ও ব্যবহার)।

বেদাঙ্গঃ বেদের মর্ম যথার্থভাবে উপলব্ধি করার জন্য বেদের ছয়খানা অবয়বগ্রন্থ অধ্যায়নের প্রয়োজন। এই অবয়ব গ্রন্থগুলিকে বলা হয় বেদাঙ্গ। বেদাঙ্গ শাস্ত্রগুলো হলঃ ক) শিক্ষা, খ) কল্প, গ) ব্যাকরণ, ঘ) নিরুক্ত, ঙ) ছন্দ এবং চ) জ্যোতিষ।

উপবেদঃ মূল বেদের সহকারী গ্রন্থ বলে এদেরকে উপবেদ বলে। যথাঃ- ক) আয়ুর্বেদ (ভেষজশাস্ত্র), খ) ধনুর্বেদ (অস্ত্রবিদ্যা), গ) গন্ধর্ববেদ (সঙ্গীত বিদ্যা) এবং ঘ) স্থাপত্যবেদ (কৃষিবিদ্যা)

উপনিষদঃ যে গ্রন্থপাঠে ব্রহ্মবিদ্যা লাভ করা যায় তাকে উপনিষদ বলে। উপনিষদ হল বেদের সারাংশ তাই একে বেদান্তও বলা হয়। উপনিষদের সংখ্যা অনেক। বর্তমানে ১১২ খানা উপনিষদের নাম জানা গেছে। এ ১১২ খানা উপনিষদের মধ্যে বিশেষ ভাবে উল্লেখযোগ্য হলঃ ক) বৃহদারণ্যক, খ) শ্বেতাশ্বতরো, গ) ছান্দোগ্য, ঘ) ঐতরেয়, ঙ) তৈত্তিরীয়, চ) ঈশ, ছ) কেন, জ) কঠ, ঝ) প্রশ্ন, ঞ) মন্ডুক এবং ট) মান্ডুক্য প্রভৃতি।

স্মৃতি-সংহিতাঃ যা যা স্মৃত হয়েছে তাই স্মৃতি। স্মৃতি শব্দের অর্থ স্মরণ। স্মৃতি-সংহিতা পাঠ করে হিন্দুরা জানতে পারে মানুষের ধর্ম-কর্ম কি। আমাদের বিশখানা স্মৃতি-সংহিতা রয়েছে। এদের মধ্যে তিনখানা স্মৃতি-সংহিতা প্রধান ও প্রসিদ্ধ। তা হলঃ ক) মুন-স্মৃতি, খ) যাজ্ঞবল্ক-স্মৃতি এবং গ) পরাশর-স্মৃতি।

মহাভারত ও রামায়ণঃ মহাভারত ও রামায়ণ এ দুটি হিন্দুধর্মীয় গ্রন্থের মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। এই গ্রন্থ দুটি ইতিহাসে মহাকাব্য হিসাবে পরিগণিত হয়ে রয়েছে। বেদের শাশ্বত সনাতন সত্যগুলি ঐতিহাসিক কথা-কাহিনীর মধ্য দিয়ে জনসমাজে প্রচার করা এই ধর্মগ্রন্থ দুটির মুখ্য উদ্দেশ্য।

শ্রীমদ্ভগবদ্‌গীতাঃ মহাভারতের ভীষ্মপর্বের অন্তর্গত সুপ্রসিদ্ধ শ্রীমদ্ভগবদ্‌গীতা মহাভারতের অন্তর্গত হলেও স্বতন্ত্র ধর্মগ্রন্থরূপে হিন্দু সমাজে সমাদৃত। ‘চতুর্বেদের সার উপনিষদ, উপনিষদের সার এই গীতা’। ধর্মের গুঢ়তত্ত্ব গীতায় প্রকাশিত। কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধ প্রাক্কালে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ হিন্দুধর্মের সারতত্ত্ব তৃতীয় পান্ডব অর্জুনের কাছে ব্যাখ্যা করেন।

পুরাণঃ যা পুরাতন তাই পুরাণ। বেদের পুরাতন দার্শনিকতত্ত্ব ও সাধনতত্ত্ব নানাভাবে উপাখ্যানের মাধ্যমে পুরাণ প্রচার করেছে বলে একে পুরাণ বলা হয়। পুরাণে সৃষ্টিতত্ত্ব, ইতিহাস, দার্শনিকতত্ত্ব, সাধন প্রণালী প্রভৃতি নানাবিধ বিষয় পুরাণে আলোচিত হয়েছে। পুরাণের পাঁচটি লক্ষণ আছে। যথা- ক) সর্গ, খ) প্রতিসর্গ, গ) বংশ, ঘ) মন্বন্তর এবং ঙ) বংশানুচরিত। পুরাণকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে। যথাঃ- ক) মহাপুরাণ এবং খ) উপপুরাণ

মহাপুরাণঃ হিন্দুশাস্ত্রে আঠারোটি মহাপুরাণ রয়েছে। এই আঠারোটি পুরাণের মধ্যে সাতটি পুরাণ উল্লেখযোগ্য। যথাঃ ক) বিষ্ণুপুরাণ, খ) পদ্মপুরাণ, গ) বায়ুপুরাণ, ঘ) স্কদ্ধপুরাণ, ঙ) মার্কন্ডেয়পুরাণ এবং চ) ভাগবত পুরাণ প্রভৃতি।

ভাগবতপুরাণঃ ভাগবত পুরাণকে আবার দুই ভাগে ভাগ করেছেন। যথাঃ ক) দেবী ভাগবত (শ্রীদুর্গার শক্তি ও মাহাত্ম্য বর্ণিত) এবং খ) শ্রীমদ্ভাগবত বা বিষ্ণু ভাগবত (শ্রীকৃষ্ণের শক্তি ও মাহাত্ম্য বর্ণিত)।

উপপুরাণঃ মহাপুরাণের মতো উপপুরাণও আঠারো-খানা রয়েছে। যথাঃ ক) আদি, খ) নৃসিংহ, গ) বায়ু, ঘ) শিবধর্ম, ঙ) দুর্বাসঃ, চ) বৃহন্নারদীয়, ছ) নন্দিকেশ্বর, জ) উশনঃ, ঝ) কপিল, ঞ) বরুণ, ট) শাম্ব (এটি যাচাই করে নিবেন) ঠ) কালিকা, ড) মহেশ্বর, ঢ) দেবী, ণ) ভার্গব, ত) বশিষ্ট থ) পরাশর এবং দ) সূর্য ইত্যাদি।      

চন্ডিঃ চন্ডি মার্কন্ডেয় পুরাণের অন্তর্ভুক্ত হলেও প্রকৃতি পক্ষে একটি স্বতন্ত্র হিন্দু ধর্মগ্রন্থ রূপে স্বীকৃত। জগৎ জননী মা দুর্গার আগমনে অর্থাৎ দুর্গা পূজার সময় পাঠ করা হয়। এছাড়াও গীতা মত চন্ডি হিন্দুদের নিত্য-পাঠ্য বিষয়।

আগম শাস্ত্রঃ হিন্দুধর্মে আগম শাস্ত্রের সংখ্যা অনেক। আগম শাস্ত্র হল দেবদেবীর পূজা-অর্চনার পদ্ধতি বিষয়ক সম্প্রদায়ক গ্রন্থ। হিন্দুধর্মের তিনটি সম্প্রদায় রয়েছে। যথাঃ ক) শৈব, খ) বৈষ্ণব এবং গ) শাক্ত। এ তিনটি সম্প্রদায়ের নিজ নিজ আগম শাস্ত্র রয়েছে। এ গুলিকে যথাক্রমে শৈবাগম (শিব), বৈষ্ণাবগম (বিষ্ণু) এবং শাক্ত্যগম (মহামায়া) বলা হয়। এ সম্প্রদায়ের কাছে শিব, বিষ্ণু মহামায়া-ই হল পরমতত্ত্ব।

ষড়দর্শনঃ ষড়দর্শন হল ছয়টি দর্শন বা শাস্ত্র। তা হলঃ ক) সাংখ্য-দর্শন, খ) যোগ-দর্শন, গ) ন্যায়, ঘ) বৈশেষিক, ঙ) পূর্ব-মীমাংসা, এবং চ) উত্তর-মীমাংসা বা বেদান্ত-দর্শন।

এছাড়াও বিভিন্ন শাস্ত্রের দুর্বোধ্যতা দূর করার জন্য অনেক ভাষ্যকারগণ বহু টীকা, টিপ্পনী, বার্তিক রচিত করেছেন। এদের মধ্যে ব্রহ্মসূত্রের উপর দু’খানা উল্লেখযোগ্য ভাষ্য হলঃ শঙ্করাচার্যের “শারীরিক ভাষ্য” আর রামানুজের “শ্রীভাষ্য”। অতপর গোবিন্দনন্দ শারীরিক ভাষ্যের উপর “রতনপ্রভা” নামে একটি টীকা রচনা করেন।

(বি:দ্র: যেকোন সমস্যা বা ভুল হলে আমাদেরকে কমেন্ট করে জানাবেন-ধন্যবাদ)

==বাংলাদেশ  সেবাশ্রম==
Share on Google Plus

About Bangladesh Sebashrom

This is a short description in the author block about the author. You edit it by entering text in the "Biographical Info" field in the user admin panel.
    Blogger Comment
    Facebook Comment

0 comments:

Post a Comment

Note: Only a member of this blog may post a comment.