শ্রীশ্রীলক্ষ্মীদেবীর ব্রতকথা
লক্ষ্মীদেবীর ধ্যানঃ- ওঁ পাশাক্ষমালিকান্তোজ-সৃণিভির্যাম্যসৌম্যয়োঃ।
পদ্মাসনাস্থাং ধ্যায়েচ্চ শ্রিয়ং ত্রৈলোক্যমাতরম্।।
গৌরবর্ণাং সুরূপাঞ্চ সর্বালঙ্কার-ভূষিতাম্। রৌক্মপদ্ম-ব্যগ্রকরাং বরদং
দক্ষিণেনতু।। পূজামন্ত্র-শ্রীং লক্ষ্মীদেব্যৈ নমঃ।
পুষ্পাঞ্জলী মন্ত্রঃ- নমস্তে সর্বদেবানাং বরদাসি হরিপ্রিয়ে।
যা গতিস্তং প্রপন্নানাং সা মে ভূয়াত্ত্বদর্চ্চনাৎ।
প্রণাম মন্ত্রঃ- ওঁ বিশ্বরূপস্য ভার্ষাসি পদ্মে
পদ্মলয়ে শুভে। সর্ব্বতঃ পাহি মাং দেবি মহালক্ষ্মী নমোহস্তুতে।।
স্তবঃ- ওঁ ত্রৈলোক্য পূজিতে দেবি কমলে বিষ্ণবল্লভে। যথা ত্বং সুস্থিরা কৃষ্ণে তথা
ভব ময়ি স্থিরা।। ঈশ্বরী কমলা লক্ষ্মীশ্চলা ভূতির্হরিপ্রিয়া। পদ্মপদ্মলয়া সম্পদ্ সৃষ্টি
শ্রীঃ পদ্মধারিণী।। দ্বাদশৈতানি নামানি লক্ষ্মীং সংপূজ্য যঃ পঠেৎ। স্থিরা লক্ষ্মীর্ভবেস্তস্য
পুত্রদারদিভিঃ সহ।।
ব্রতকথাঃ- দোল পূর্ণিমার নিশি নির্মল
আকাশ। ধীরে ধীরে বহিতেছে মলয় বাতাস। লক্ষ্মীদেবী বামে করি বসি নারায়ণ। করিতেছে নানা
কথা সুখে আলাপন।। সেইকালে বীণা হস্তে নারদ মুনিবর। লক্ষ্মী নারায়ণে নমি কহিল বিস্তর।।
ঋষি বলে মাগো তব কেমন বিচার। সর্বদা চঞ্চলা হয়ে ফির দ্বারে দ্বার।। মর্তবাসী সদা তাই
ভুগিছে দুর্গতি। ক্ষণেকের তরে তব নাহি কোথা স্থিতি।। প্রতিদিন অন্নাভাবে সবে দুঃখ পায়।
প্রতি গৃহে অনশন জীর্ণ-শীর্ণকায়। নারদের বাক্য শুনি লক্ষ্মী ঠাকুরাণী।
সঘনে নিঃশ্বাস ত্যাগী কহে মৃদুবাণী।
কভুনা কাহার প্রতি আমি করি রোষ। নরনারী দুঃখ পায় নিজ কর্মদোষ।। যাও তুমি ঋষিবর ত্রিলোক
ভ্রমনে। ইহার বিধান আমি করিব যতনে।। অতঃপর চিন্তি লক্ষ্মী নারায়ণে কয়। কিরূপে হরিব
দুঃখ কহ দয়াময়।।
হরি কহে শুন সতী বচন আমার। মর্ত্যধামে
লক্ষ্মী ব্রত করহ প্রচার।। বৃহস্পতিবারে মিলি যত ত্রয়োগনে। সন্ধ্যাকালে পূজি কথা শুনি
ভক্তিমানে।। বাড়িবে ঐশ্বর্য তাহে তোমার কৃপায়। দুঃখ কষ্ট দূরে যাবে তোমার দয়ায়। শ্রীহরির
বাক্য শুনি আনন্দিত মনে। মর্ত্য চলিলেন লক্ষ্মী ব্রত প্রচারণে।। অবন্তী নগরে লক্ষ্মী
হ’ল উপনীত। দেখিয়া শুনিয়া হ’ল বড়ই স্তম্ভিত।।নগরের লক্ষপতি ধণেশ্বর রায়। অগাধ ঐশ্বর্য
তার কুবেরের প্রায়।। সোনার সংসার তার শূন্য হিংসাদ্বেষ। প্রজাগণে পালিত সে পুত্র নির্বিশেষ।।
এক অন্নে সাত পুত্র রাখি ধনেশ্বর। যথাকালে সসম্মানে গেল লোকান্তর।। পিতার মৃত্যুর পর
সপ্ত সহোদর। হইল পৃথক অন্ন সপ্ত সহোদর।। ক্রমে ক্রমে লক্ষ্মীদেবী ছাড়িল সবারে। সোনার
সংসার সব গেল ছারখারে।। বৃদ্ধা ধনেশ্বর পত্নী না পারি তিষ্ঠিতে। গহন কাননে যায় জীবন
ত্যজিতে।। হেনকালে ছদ্মবেশে দেবী নারায়ণী। বন মাঝে উপনীত হলেন আপনি।। মধুর বচনে দেবী
জিজ্ঞাসে বৃদ্ধারে। কিজন্য এসেছ তুমি গহন কান্তারে।।কাঁদিতে কাঁদিতে বৃদ্ধা অতি দুঃখভরে।
তাহার ভাগ্যের কথা বলিল লক্ষ্মীরে।। সহিতে না পারি আর সংসার যাতনা। ত্যজিব জীবন আমি
করেছি বাসনা।। লক্ষ্মীদেবী বলে শুন আমার বচন। মহাপাপ আত্মহত্যা নরকে গমন।। আমি বলি
সাধ্বী তুমি কর লক্ষ্মীব্রত। দুঃখ রবি অস্ত যাবে হবে পূর্বমত।। মনেতে লক্ষ্মীর মূর্তি
করিয়া চিন্তন। একমনে ব্রতকথা করিবে শ্রবণ।। যেই গৃহে লক্ষ্মীব্রত গুরুবারে হয়।। বাঁধা
থাকে লক্ষ্মী তথা জানিও নিশ্চয়।। বলিতে বলিতে দেবী নিজ মূর্তি ধরি।। দরশন দিলা তারে
লক্ষ্মী কৃপা করি।। মূর্তি হেরি বৃদ্ধা তাঁরে প্রণাম করিল। আনন্দিত হয়ে বৃদ্ধা গৃহেতে
ফিরিল।। গৃহেতে ফিরিয়া বৃদ্ধা করিল বর্ণন। যেরূপে ঘটিল তা্র দেবী দরশন। ব্রতের বিধান
সব বধূদের বলে। শুনি বধূগণ ব্রত করে কৌতুহলে।। বধূগণ হয়ে বৃদ্ধা করে লক্ষ্মীব্রত। হিংসা
দ্বেষ-স্বার্থ ভাব হৈল তিরোহিত। মা লক্ষ্মী করিল তথা পুনরাগমন। অচিরে হইল গৃহ শান্তি
নিকেতন।। দৈব্যযোগে একদিন বৃদ্ধার আলয়ে। উপনীত এক নারী ব্রতের সময়ে।। ব্রতকথা শুনি
তার ভক্তি উপজিল। লক্ষ্মীব্রত করিবারে মানস করিল।। স্বামী তার চিরূগ্ন ক্ষম অর্জনে।
ভিক্ষা করি যাহা পায় খায় দুইজনে।। এই কথা চিন্তিত নারী করিছে কামনা। নিরোগ স্বামীরে
কর চরণে বাসনা।। ঘরে গিয়া এয়ো লয়ে কর লক্ষ্মীব্রত। ভক্তিসহ সাধ্বী নারী পূজে বিধিমত।।
দেবীর কৃপায় তার দুঃখ হলো দূর। পতি হলো সুস্থ দেহ ঐশ্বর্য প্রচুর। কালক্রমে শুভদিনে
জন্মিলে তনয়। সংসার হইল তার সুখের আলয়।। দয়াময়ী লক্ষ্মীমাতা সদয় হইল। রূপবান পুত্র
এক তাহার জন্মিল।। এইরূপে লক্ষ্মীব্রত করে ঘরে ঘরে। প্রচারিত হয় ক্রমে অবন্তী নগরে।
শুন শুন ত্রয়োগণ এক অপূর্ব ব্যাপর। ব্রতের মাহাত্ম্য হ’ল যে ভাবে প্রচার। অবন্তী নগরে
এক গৃহস্থ ভবনে। এয়োগণ লক্ষ্মীব্রত করে একমনে।। সহসা সেখানে এলো বণিক তনয়। উপনীত হলো
তথা ব্রতের সময়।। ধনরত্ন আদি করি ভাই পঞ্চজন। পরস্পর অনুগত রয় সর্বজন।। ব্রত দেখি হেলা
করি সাধুর তনয়। বলে একি ব্রত, ইথে কিবা ফলোদয়।। সদাগর বাক্য শুনি বলে বামাগণ। করি লক্ষ্মীব্রত
যতেক কামনা পূরণ।। এই ব্রত যে করিবে ধনে জনে তার। লক্ষ্মী বরে হবে তার সোনার সংসার।।
শুনি তাহা সদাগর বলে অহঙ্কারে। যে জন অভাবে থাকে সে পূজে উহারে।। ধনৈশ্বর্য্য ভোগ আদি
যা কিছু সম্ভব। সবই তো আমার আছে আর কি ভাবে হবে।। ভাগ্যে না থাকিলে লক্ষ্মী কিবা দিবে
ধন। হেন কথা কভু আমি না শুনি কখন।। অহঙ্কার বাক্য লক্ষ্মী সহিতে না পারে। গর্বের কারণে
লক্ষ্মী ছাড়িল তাহারে।। ধনমদে মত্ত হয়ে লক্ষ্মী করি হেলা।। নানা রত্ন পূর্ণ তরী বণিজ্যেতে
গেলা।। দৈবযোগে লক্ষ্মী কোপে সহ ধনজন। সপ্ততরী জলমধ্যে হইল নিমগন।। গৃহমধ্যে ধনৈশ্বর্য
যা ছিল তাহার। বজ্রাঘাতে দগ্ধ হয়ে হলো ছারখার।। দূরে গেল ভ্রাতৃভাব হলো ভিন্ন অন্ন।।
সোনার সংসারে তার সকলে বিপন্ন। ভিক্ষাজীরী হয়ে সবে ফিরে ঘরে ঘরে। পেটের জ্বালায় ঘোরে
দেশ দেশান্তরে।। এরূপ হইল কেন বুঝিতে পারিল। কেঁদে কেঁদে লক্ষ্মীস্তব করিতে লাগিল।।
সদয়া হইল লক্ষ্মী তাহার উপরে। পুনরায় কৃপা দৃষ্টি দেন সদাগরে।। মনে মনে মা লক্ষ্মীরে
করিয়া প্রণাম। ব্রতের সঙ্কল্প করি আসে নিজ ধাম।। লক্ষ্মীব্রত করে সাধু লয়ে বধুগণ। সাধুর
সংসার হলো পূর্বের মতন।। এইভাবে লক্ষ্মীব্রত মর্তেতে প্রচার। সদা মনে রেখো সবে লক্ষ্মীব্রত
সার।। এই ব্রত যেই নারী করে একমনে। ব্রতকথা যেবা পড়ে যেবা রাখে ঘরে। লক্ষ্মীর কৃপায়া
তার মনোবাঞ্ছা পুরে।। লক্ষ্মীর ব্রতের কথা বড় মধুময়। প্রণাম করিয়া যাও যে যার আলয়।।
লক্ষ্মী ব্রতকথা হেথা হৈল সমাপন। মনের আনন্দে বল লক্ষ্মীনারায়ণ প্রিতি প্রেমানন্দে
হরি হরি বল।।
-অথ প্রতি বৃহস্পতিবারের লক্ষ্মীর ব্রতকথা সমাপ্ত-
==বাংলাদেশ সেবাশ্রম==
0 comments:
Post a Comment
Note: Only a member of this blog may post a comment.