রুদ্রাক্ষের গুণাগুণ ও মাহাত্ম্য বর্ণনা


রুদ্রাক্ষের গুণাগুণ ও মাহাত্ম্য বর্ণনা

রুদ্রাক্ষের গুণাগুণ ও মাহাত্ম্য বর্ণনা (দেবীভাগবতম্‌ হইতে):-‘রুদ্রদেব’ এর অশ্রুবিন্দু হইতেই সর্বলোকের হিতকামনায় মহারুদ্রাক্ষ বৃক্ষের সৃষ্টি হয়। সেই রুদ্রাক্ষ আটত্রিশ প্রকার। তন্মধ্যে তাঁহার সূর্য্য রূপ নেত্র হইতে দ্বাদশ প্রকার পিঙ্গলবর্ণ, চন্দ্র রূপ নেত্র হইতে ষোড়শ প্রকার শ্বেতবর্ণ এবং অগ্নিরূপ নেত্র হইতে দশপ্রকার কৃষ্ণবর্ণ রুদ্রাক্ষ উৎপন্ন হয়। তন্মধ্যে শ্বেতবর্ণ রুদ্রাক্ষ জাতিতে ব্রাহ্মণ, সুতরাং তাহা ব্রাহ্মণের ধার্য্য। রক্তবর্ণ রুদ্রাক্ষ ক্ষত্রিয়, ও কারণে তাহা ক্ষত্রিয়ের ধার্য্য। মিশ্রবর্ণ রুদ্রাক্ষ বৈশ্য এবং কৃষ্ণবর্ণ শূদ্র বলিয়া যথাক্রমে তাহা বৈশ্য ও শূদ্রের ধার্য্য। ব্রহ্মা রুদ্রাক্ষের মুখ; রুদ্র-বিন্দুতে, বিষ্ণু-পুচ্ছ। বিশুদ্ধ রুদ্রাক্ষ মস্তকে/কন্ঠে অথবা করে ধারণ করিতে হয়। যে ব্যক্তি হস্তে, বক্ষঃস্থলে, কন্ঠে, মস্তকে রুদ্রাক্ষ ধারণ করে সে সাক্ষাৎ রুদ্র। কুকুরেও কন্ঠে রুদ্রাক্ষ মালা বন্ধন পূর্বক প্রাণত্যাগ করিলে মুক্তিলাভ করে। অপরের তো কথাই নাই।

মালাসমূহের মধ্যে রুদ্রাক্ষই প্রধান। একমুখ, পঞ্চমুখ, একাদশমুখ ও চতুর্দশমুখ রুদ্রাক্ষ বিশেষ প্রশস্ত এবং সকলেরই পূজনীয়। রুদ্রাক্ষ সাক্ষাৎ শঙ্কর স্বরূপ। অতএব সতত ভক্তিপূর্বক উহা পূজিত হইয়া থাকে। রুদ্রাক্ষের এমনি মহিমা যে উহা দরিদ্র মনুষ্যেকে রাজা করিতে পারে। রুদ্রাক্ষ ধারণ করিলে শিবতত্ত্ব জ্ঞান হয়।
আমলকী ফলপ্রমাণ রুদ্রাক্ষ শ্রেষ্ঠ; বদরী ফলপ্রমাণ রুদ্রাক্ষ মধ্যম এবং চণক প্রমান রুদ্রাক্ষ অধম।

চন্দ্র সূর্য্যের গ্রহণকালে, বিষ্ণু ও অয়ন সংক্রমে, অমাবস্যা ও পূণ্য দিবসে রুদ্রাক্ষ ধারণ করিলে, মানবগণ তৎক্ষণাৎ সর্বপ্রকার পাপ হইতে মুক্ত হয়।


রুদ্রাক্ষ নির্ঘন্ট
মুখ
রুদ্রাক্ষ মাহাত্ম্য বর্ণন (চতুর্থ অধ্যায় হইতে)
ধারণের ফল
রুদ্রাক্ষ মাহাত্ম্য বর্ণন (সপ্তম অধ্যায় হইতে)
ধারণের ফল
এক
একমুখ রুদ্রাক্ষ সাক্ষাৎ শিবস্বরূপ
ব্রহ্মহত্যা পাপ পর্যন্ত বিদুরিত হয়
একমুখ রুদ্রাক্ষ পরতত্ত্ব প্রকাশক
পরতত্ত্বের প্রকাশ অর্থাৎ জ্ঞান হয়।
দ্বি
দ্বিমুখ রুদ্রাক্ষ দেবদেবীস্বরূপ
দ্বিবিধ পাপই বিনষ্ট হয়
দ্বিমুখ রুদ্রাক্ষ অর্দ্ধনারীশ্বর
অর্দ্ধনারীশ্বর প্রীত হন
ত্রি
ত্রিমুখ রুদ্রাক্ষ সাক্ষাৎ অনলস্বরূপ
ক্ষণকাল মধ্যে স্ত্রীহত্যা পাপ নষ্ট করে
ত্রিমুখ রুদ্রাক্ষ ত্রিবিধ অগ্নিস্বরূপ
অগ্নিদেব সর্বদা সন্তুষ্ট হন।
চতু
চতুম্মুখ রুদ্রাক্ষ সাক্ষাৎ ব্রহ্মস্বরূপ
নরহত্যা পাপ নাশক
চতুম্মুখ রুদ্রাক্ষ সাক্ষাৎ পিতামহস্বরূপ
শ্রীবৃদ্ধি, উত্তম আরোগ্য, মহতী জ্ঞান, সম্পত্তি এবং বিশুদ্ধ লাভ হয়।
পঞ্চ
পঞ্চমুখ রুদ্রাক্ষ সাক্ষাৎ রুদ্রস্বরূপ
সকল প্রকার পাপ হইতে মুক্ত হওয়া যায়
পঞ্চমুখ রুদ্রাক্ষ পঞ্চ ব্রহ্মস্বরূপ
মহেশ্বর সন্তুষ্ট হন।
ষষ্ঠ
ষম্মুখ রুদ্রাক্ষ কার্ত্তিকেয় স্বরূপ
ব্রহ্ম-হত্যাদি পাপ হইতে মুক্ত হওয়া যায়
ষম্মুখ রুদ্রাক্ষ সাক্ষাৎ ষড়ানন
গণপতি সন্তুষ্ট থাকেন।
সপ্ত
সপ্তমুখ রুদ্রাক্ষের নাম অনঙ্গ
স্বর্ণ হরিণাদি পাতক হইতে মুক্ত হওয়া যায়
সপ্ত রুদ্রাক্ষ সপ্তাশ (সূর্য্য) ও সপ্তর্ষি
শ্রী, উত্তম আরো মহতী জ্ঞান, সম্পত্তি ও পবিত্রতা লাভ হয়।
অষ্ট
অষ্টমুখ রুদ্রাক্ষ দেব বিনায়ক স্বরূপ
অন্নরাশি, তুলারাশি ও স্বর্ণরাশি প্রাপ্ত হওয়া যায়
অষ্টমুখ রুদ্রাক্ষের অধিষ্ঠাত্রী দেবতা অষ্টমাতৃকা
অষ্টবসু ও গঙ্গাদেবী প্রীত হন। ধারণকর্ত্তা সত্যবাদী হন।
নয়
নবমুখ রুদ্রাক্ষ সাক্ষাৎ ভৈরবস্বরূপ
বাম হস্তে ধারণ করিতে হয়। ধারণে ভোগ মোক্ষ লাভ করে
নবমুখী রুদ্রাক্ষ সাক্ষাৎ যমদেবতা
যমভয় হয় না।
দশ
দশমুখ রুদ্রাক্ষ সাক্ষাৎ দেবদেব জনার্দন স্বরূপ
গ্রহ, পিশাচ, বেতাল, ব্রহ্ম-রাক্ষস ও পন্নগ প্রভৃতির উপদ্রব উপশান্ত হয়
দশমুখ রুদ্রাক্ষের অধিষ্ঠাত্রী দেবতা দশদিক
দশদিগ্‌দেবতা প্রীত হন।
একাদশ
এদাদশমুখ রুদ্রাক্ষ একাদশ রুদ্রস্বরূপ
সহস্র অশ্বমেধ যজ্ঞ, শতবাজপেয় যজ্ঞ এবং শত সহস্র গোদানের ফল লাভ হয়
একাদশ রুদ্রাক্ষের অধিদেবতা একাদশ রুদ্র এবং ইন্দ্র
সর্বদা সুখ বৃদ্ধি হয়।
দ্বাদশ
দ্বাদশমুখ রুদ্রাক্ষ আদিত্যস্বরূপ
আদিত্যগণ সন্তুষ্ট হন। গোমেধ অশ্বমেধ যজ্ঞের ফলপ্রাপ্ত হওয়া যায়
দ্বাদশ রুদ্রাক্ষ মহাবিষ্ণুস্বরূপ এবং আদিত্য উহার অধিষ্ঠাত্রী দেবতা
একাগ্র চিত্তে উহা ধারণ করিতে হয়।
এয়োদশ
ত্রয়োদশমুখ রুদ্রাক্ষ অতি দুর্লভ
সকল প্রকার কামনা ও অষ্ট সিদ্ধি লাভ হয়
ত্রয়োদশমুখ রুদ্রাক্ষ কাম ও সিদ্ধিপ্রদ
কামদেব প্রসন্ন হন।
চতুর্দশ
চতুর্দশ রুদ্রাক্ষ শিবতুল্য
ধারণকর্ত্তা শিবতুল্য হয়
চতুর্দশমুখ রুদ্রাক্ষ রুদ্রদেব স্বরূপ
সকল প্রকার আরোগ্যদায়ক
(বিঃদ্রঃ):- স্বয়ং ছিদ্রযুক্ত রুদ্রাক্ষই সর্বোৎকৃষ্ট বলিয়া কথিত। যে রুদ্রাক্ষ ছিদ্র করিয়া লইতে হয় তাহা মধ্যম। সমান চাকচিক্যশালী কঠিন রুদ্রাক্ষ ক্ষৌম সূত্র দ্বারা গ্রন্থন পূর্বক ধারণ করায় যে সর্বগাত্রে কষ্টিপ্রস্তরে সুবর্ণরেখার ন্যায় সমান ও সুন্দর রেখা দেখা যায়, তাহাই অত্যুত্তম; শৈবগণ সেই রুদ্রাক্ষ ধারণ করিবেন।


“জয় রাধেশ্যাম”


==বাংলাদেশ  সেবাশ্রম==
Share on Google Plus

About Bangladesh Sebashrom

This is a short description in the author block about the author. You edit it by entering text in the "Biographical Info" field in the user admin panel.
    Blogger Comment
    Facebook Comment

0 comments:

Post a Comment

Note: Only a member of this blog may post a comment.